বিগত ৫০ বছরে আরজেএসসি’র বিশেষ অর্জনঃ
যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার তথা অর্থনীতির বিনির্মানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কর বহির্ভূত রাজস্ব আয়েরও একটি অন্যতম উৎস। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তর স্থাপিত হয়। তখন ভারতের কলকাতা থেকে প্রাপ্ত কোম্পানি, পেশাদার সংগঠন ও অংশীদারী কারবারের নথিপত্র নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬২ সালে দপ্তরটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায় তিনটি বিভাগীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা হয়।
পরিদপ্তরটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ এর ডিজিটাল বাংলাদশে বির্নিমানে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে সম্পন্নের জন্য ও এ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে জানুয়ারি, ২০০৯ হতে এ দপ্তর স্বয়ংক্রীয় পদ্ধতি প্রবর্তনে নানামূখী কার্যক্রম শুরু করে। এসকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে নির্ধারন করা হয় বিভিন্ন মেয়াদি লক্ষ্য, যা এনে দেয় যুগান্তকারী সাফল্য ও গ্রাহক সেবায় যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। এ সকল যুগান্তকারী কার্মকান্ড পরিদপ্তরটিকে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সেবা প্রদানের দিক থেকে প্রথম ডিজিটাল অফিস হিসেবে দেশে ও বিদেশে পরিচিতি করে তুলছে। যা বাংলাদেশের ব্যবসা নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে বিশ্বমানে উন্নীত করেছে। ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০১১ তে (e-government) বিশেষ সম্মাননাও লাভ করেছে এ দপ্তর।
‘Ease of doing business’ এবং ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে আরজেএসসি’র নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংক থেকে প্রকাশীত ‘Ease of Doing Business (EoDB) 2019’ এর সূচকে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম ধাপ থেকে ১৬৮তম ধাপে এগিয়ে আনতে এ কার্যক্রম সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দুই ডিজিটে আনয়নের লক্ষ্যে আরজেএসসি বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। International Finance Corporation (IFC) প্রণীত Doing Business Report ২০১১-এ আরজেএসসিকে One of the top ten reformers স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
ব্যবসা সহজীকরণের জন্য এ পরিদপ্তর অদ্যাবধি নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
সেবা সহজীকরনের উদ্দেশ্যে আরজেএসসির সাথে বিভিন্ন সংস্থার চুক্তিসমূহঃ
ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে অর্জিত অগ্রগতিঃ
ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা প্রদানের ফলে যে সকল উন্নয়ণ সূচীত হয়েছে তার তুলনামূলক বিবরনী নিম্মরূপঃ
ক্রঃ নং |
সেবার নাম |
ডিজিটাইজেশন এর পূর্ব চিত্র |
বর্তমান চিত্র |
ক. |
নামের ছাড়পত্র প্রদান |
কমপক্ষে সাত দিন |
অটো ক্লিয়ারেন্স (সাথে সাথে) |
খ. |
কোম্পানি, সোসাইটি, ট্রেড অর্গানাইজেশন এবং পার্টনারশীপ ফার্ম নিবন্ধন |
৩০ দিনের মধ্যে |
৪ ঘন্টায় নিবন্ধন প্রদান |
গ. |
রিটার্ণ ফাইলিং |
মিস ফাইলিং এর ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া দুস্কর |
তথ্যসমূহ অনলাইনে পর্যবেক্ষণ করা যায় বিধায় সহজ প্রাপ্য |
ঘ. |
ফিস প্রদান |
অফিস কাউন্টারে জমা দিতে হতো ফলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো |
অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সাথে সাথে জমা প্রদান |
চ. |
নিবন্ধনের জন্য অফিসে যাতায়াত |
কমপক্ষে ৬ বার |
সাধারণত আসার প্রয়োজন হয়না |
ছ. |
স্বচ্ছতা |
অস্বচ্ছ |
স্বচ্ছ ও অনলাইন পর্যবেক্ষণ |
জ. |
সার্টিফাইড কপি প্রদান |
স্বশরীরে সংগ্রহ করতে হতো |
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রেরণ |
ঝ. |
জবাবদিহিতা |
জবাবদিহিমূলক |
কঠোর জবাবদিহিতা |
১৬ মার্চ ২০০৯ খ্রিঃ তারিখে পরিদপ্তরের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়।
চিত্রঃ Online Registration কার্যক্রম উদ্বোধন- ২০০৯
ডিজিটাল কার্যক্রম প্রবর্তনের স্বীকৃতিস্বরূপ আরজেএসসি ই-সরকার বিশেষ সম্মাননা লাভ করে।
চিত্রঃ আরজেএসসি কর্তৃক ই-সরকার বিশেষ সম্মাননা লাভ
পরিদপ্তরের ডিজিটাল সেবার সুফল সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবহারের লক্ষ্যে নিবন্ধিত কোম্পানি সমূহের তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য আরজেএসসি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে তথ্য বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চিত্রঃ আরজেএসসি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে তথ্য বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহমেদ পরিদপ্তরের ডিজিটাল স্বাক্ষর কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, যা সামগ্রীক ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে পূর্ণতা প্রদান করেছে।
চিত্রঃ মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহমেদ কর্তৃক ডিজিটাল স্বাক্ষর কার্যক্রম উদ্বোধন।
আরজেএসসির সেবা সমূহের ফি অনলাইনে প্রদানের উদ্দেশ্যে ক্রেডিট কার্ড ও ডেভিট কার্ড সার্ভিস চালুর জন্য সিটি ব্যাংকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।
চিত্রঃ আরজেএসসি ও সিটি ব্যাংকের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর।
উন্নয়ন মেলা-২০১৮ এ অংশগ্রহণ।
চিত্রঃ উন্নয়ন মেলায় আরজেএসসি-এর স্টল।
Signing Ceremony of Memorandum of Understanding National Single Window
চিত্রঃ NBR-এর সাথে National Single Window সম্পর্কিত MOU স্বাক্ষর।
ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে MOU চুক্তি স্বাক্ষর।
চিত্রঃ আরজেএসসি ও বিডার মধ্যে OSS-এর MOU স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
আরজেএসসির সেবাসমুহ গ্রাহক পর্যায়ে আরো সহজীকরনের উদ্দেশ্যে গ্রাহক পর্যায়ে ডিজিটাল স্বাক্ষর চালু করণের লক্ষে দোহাটেক মিডিয়ার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর
চিত্রঃ ডিজিটাল স্বাক্ষর চালুর মাধ্যমে আরজেএসসি ও দোহাটেক মিডিয়ার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর।
আরজেএসসি’র IT Enable Services -এর কার্যক্রম চালু রাখার লক্ষ্যে অতিসম্প্রতি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসাল্টেন্টস লিমিটেড এর সাথে আরজেএসসি’র চুক্তিকাল বর্ধিত করার লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চিত্রঃ আরজেএসসি ও ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসাল্টেন্টস লিমিটেড এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর।
যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্ম সমূহের পরিদপ্তরের অধিকাংশ কার্যক্রম বর্তমানে কম্পিউটারের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। দপ্তরের প্রশাসনিক ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সংশ্লিষ্ট যে সামান্য কিছু কাজ এখনো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে করা হচ্ছে তা ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনার মাধ্যমে এই পরিদপ্তরকে খুব শীঘ্রই একটি পেপারলেস (Paperless) অফিসে রুপান্তরের প্রত্যয়ে এই পরিদপ্তর নিরলসভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আশা করা যায় এই কাজের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রুপকল্প-২০২১ এর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মান কর্মসূচী বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।